কাজী কাদের নেওয়াজ যখন ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটি লিখেছিলেন, তখন হয়তো তিনি ভাবতেই পারেননি কিছু কিছু মানুষ শিক্ষকের বেশ ধরে ‘অপকর্ম’ করতে পারে। নিঃসন্দেহে শিক্ষক শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু যারা শিক্ষকতার আড়ালে অন্যায়-অপরাধ করে বেড়ায়, তারা প্রকৃত শিক্ষক যেমন নয়, তেমন শ্রদ্ধার পাত্রও নয়। হারুন অর রশিদ মিঞা নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে এ কথাগুলোই ভাবনায় আসে।
হারুন অর রশিদ মিঞার বিরুদ্ধে অভিযোগ—ছাত্রীদের যৌন হয়রানি। সোমবার আজকের পত্রিকার ছাপা সংস্করণের একটি খবর থেকে জানা যায়, তিনি ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি গাজীপুরের কালীগঞ্জের পুনসহি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। সেখানে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ছাড়াও বিদ্যালয়ের অর্থ জালিয়াতিসহ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ‘ট্যাব’ আত্মসাতেরও অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটি তাঁকে গত বছরের ৩০ অক্টোবর প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করে। এরপর নাকি তিনি বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে চলে যান। এমনকি অন্য শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানিও করেছেন।
তবে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরও যে একটি পুরোনো অভিযোগ রয়েছে তা ছিল পুনসহি উচ্চবিদ্যালয়ের সবার কাছে অজানা। হারুন অর রশিদ মিঞা এর আগে ছিলেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার চর আমলাব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সেখানে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে সেই ঘটনায় তিনি সাত মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হন। এরপর তথ্য গোপন করে পুনসহি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর-ই-জান্নাত বলেছেন, হারুন অর রশিদ মিঞার নিয়োগের সময় মামলার বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। প্রশ্ন, ‘কেন জানা ছিল না’ নয়, ‘কেন জানা হয়নি?’ একটি প্রতিষ্ঠানে যেকোনো পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে সেই ব্যক্তির ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’ ভীষণ জরুরি। নইলে যে কেউ সাধুর বেশে ঢুকে ওই প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করাটা অস্বাভাবিক নয়। আর এখানে আলাপ হচ্ছে সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান ‘স্কুল’ নিয়ে, যেখানে মানুষ গড়া হয়।
ওই শিক্ষক বলছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।’ ধর্ষণ মামলা আছে যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে, যে অপরাধে তিনি জেল খেটেছেন, তিনি নিজের পক্ষে কী সাফাই গাইলেন, সেটা বোধ হয় আলোচনার বিষয় হতে পারে না। নানা কাণ্ডকীর্তির কারণে এ কথা পরিষ্কার, শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই।
হারুনের মতো ব্যক্তিরা হয়তো মনভোলানোর কায়দাকানুন জানেন, তাই তাঁদের কেউ সন্দেহ করতে পারে না। কেউ বুঝতেই পারে না যে এমন ব্যক্তিরা প্রধান শিক্ষক তো নয়ই, শিক্ষক হওয়ারই যোগ্যতা রাখেন না। আর এ রকম অসৎ ব্যক্তিদের সাধুবেশের কারণেই আমরা ধাঁধায় পড়ি, নীতিহীনতায় ভুগি। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত শিক্ষক নিয়োগ করা হলে অন্তত শিক্ষায়তনে কোনো অনৈতিক কাজ হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।